চাঁদা না পেয়ে’ চট্টগ্রাম আইন কলেজে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে। খোদ চট্টগ্রাম আইন কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর চৌধুরী এই অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কাছে চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেয়ে এলএলবি শেষ বর্ষের ২০২০-২০২১ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ কুখ্যাত রফিকুল ইসলাম রাফি ও মাহমুদুল হাসান বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধা সাড়ে ৬টায় ভর্তি হতে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। সেদিন এক প্রতিবন্ধীসহ ৬ জন শিক্ষার্থীকে দেখা মাত্র এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে।
ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ সেদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি ও আইন কলেজ অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বরাবর রফিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর বিজ্ঞপ্তি পেয়ে একদল সাধারণ শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে যান।
এসময় ভর্তি ফরম সংগ্রহ করা শিক্ষার্থীদের হাত থেকে ভর্তি ফরম কেড়ে নিয়ে মারধর করে রফিক বাহিনীর সদস্যরা।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা মো. শাহেদুল আলম, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাইমুন্নাহার লুনা ও নিজাম উদ্দীন মিজবাসহ ৬ জন সাধারণ শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় আহত মাইমুন্নাহার লুনা বলেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর আমি কলেজ ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার জন্য গেলে শাহেদুল আলমকে মারধর করতে দেখি। মারধরের ঘটনা আমার মোবাইলে ধারণ করার সময় আমাকে শ্লীলতাহানি করে আমার ফোন কেড়ে নেয়। এসময় সে বলে কলেজে ভর্তি হতে হলে আগে তার অনুমতি নিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার কাছে কিছুই না।’
অভিযোগ স্বীকার করে রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকুল ইসলাম রাফি বলেন, কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। আমরা কাউকে মারধর করিনি। জাস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সতর্ক করেছি ভর্তি না হওয়ার জন্য।’
অভিযোগ আছে, এর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে মেয়েদের সাথে ইভটিজিং করায় শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী গণস্বাক্ষর নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ প্রদান করেন রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম আইন কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ‘আমার কলেজে কোনো ছাত্রশিবির আর ছাত্রদল নেই। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। এর আগেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে ৪টি জিডি ও মামলা করেছে। এছাড়াও ১০০ জন মেয়ে শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে ইভটিজিং এর অভিযোগ করেছিল। পরে মাফ চেয়ে পার পেয়েছে। এখন আমার কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সে চাঁদা চাচ্ছে। আমি তাকে বললাম, ভর্তির লেনদেন তো ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। শিক্ষার্থীরা ব্যাংকে টাকা জমা দেয়। আমি কেমনে তাকে চাঁদা দেব?’
৬ জন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় রফিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা একটি অভিযোগ দিয়েছে। এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আইন কলেজে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দায়ের করা জিডির তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’