Google search engine

রেল লাইন কেটে নিলো দুর্বৃত্তরা, ৭ বগি লাইনচ্যুত

গাজীপুরের বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় রাজেন্দ্রপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে ঢাকা অভিমুখী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় আসলাম (৩৫) নামের একজন মুরগি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। ট্রেনের গতি কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। অন্যথায় ঘটতে পারতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

নিহত আসলাম ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার রওহা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

১৩ ডিসেম্বর,বুধবার ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরের বনখড়িয়া (চিলাই নদীর) ব্রিজে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রাতের কোনো এক সময় বনখড়িয়া এলাকায় গ্যাসকাটার দিয়ে রেললাইন কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। কিছুদূর যাওয়ার পরপরই ট্রেনটি বনখড়িয়া এলাকায় পৌঁছলে ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় ট্রেনের এক যাত্রী মারা যান। ঘটনার পর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বাসিন্দা নূরুল ইসলাম জানান, রাত ১১টায় মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে। তিনি ওই ট্রেনে স্ত্রীকে নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা আসছিলেন। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশন পার হওয়ার পরই বিকট শব্দে ট্রেনটি কাত হয়ে পড়ে। পেছনের দিকে বগিতে ছিলেন। তখন রাত আনুমানিক সোয়া ৪টা বা সাড়ে ৪টা বাজে। এ সময় যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে বুঝতে পারেন ট্রেনে কিছু একটা হয়েছে। পরে জানতে পারেন, ট্রেনের ইঞ্জিন পড়ে গেছে লাইন থেকে।

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি ইঞ্জিনের পরের বগিতেই ছিলেন। ঘন কুয়াশা থাকায় ট্রেন ধীর গতিতে চলছিল। তিনি ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ হলে তার ঘুম ভাঙ্গে। তখন দেখতে পান কয়েকটি বগি লাইন থেকে নিচু জমিতে পড়ে রয়েছে। অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে তিনিও অনেক কষ্টে জানালা দিয়ে বের হয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন।

তিনি বলেন, ধীরগতি থাকায় একজন নিহত হয়েছে। দ্রুতগতিতে ট্রেন চললে এ দুর্ঘটনায় আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতো। ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যাত্রীদের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। সবার মুখে মুখে শুনছি ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা মুরগী ব্যবসায়ী আসলাম (৩৫)। তিনি ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা বগির মাঝখানে বসেছিলেন। হয়তোবা ট্রেন পড়ে গেলে তিনিও পড়ে মারা গেছেন।

অপর নারী যাত্রী কুলছুম আক্তার বলেন, মানুষ কীভাবে কাজটি করলো। ট্রেন লাইন কেটে রাখা কী করে সম্ভব? এতে আরও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো। যারা এ কাজ করেছে তাদের কী আত্মীয় স্বজন, বাবা-মা ও ভাই-বোন নেই। তাদেরওতো স্বজনেরা এ ট্রেনে থাকতে পারতো। আল্লাহ তুমি রহম করো।

এদিকে, গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ঢাকা থেকে চলাচল করতে পারে সেজন্য রুট পরিবর্তনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো ঢাকা-বিমানবন্দর-টঙ্গী-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করছে।

এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এসআই শহিদুল্লাহ হিরো জানান, ইঞ্জিনসহ ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। কে বা কারা রাতের অন্ধকারে রেললাইন কেটে ফেলে। ফলে ট্রেনটি এ দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনার পর থেকে রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ