চান্দগাঁও থানায় দুদক কর্মকর্তা মৃত্যু মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. জসীম উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মেট্টো ইউনিট। মঙ্গলবার (আজ) ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বাকলিয়া থানার রাহাত্তালপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন বলেন, চান্দগাঁও থানায় পুলিশ হেফাজতে অবসরপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের মামলার আসামি মো. জসীম উদ্দীম (৩৭)। গতকাল (সোমবার) রাতে বাকলিয়া থানাধীন লাহাত্তারপুল এলাকা থেকে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন।
গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে অবসরপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করলে থানায় মামলা রেকর্ড করার আদেশ দেন। মামলার আসামিরা হলেন, তৎকালীন চাদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ, এএসআই সোহেল রানা, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মবিনুল হক, চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা এসএম আসাদুজ্জামান (৫২), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন, মো. লিটন (৪৮), রনি আক্তার তানিয়া (২৬) ও কলি আক্তার (১৯)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শহিদুল্লাহর সঙ্গে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ ছিল স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে শহিদুল্লাহকে ফাঁসাতে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বাদী সাজানো হয় রণি আক্তার তানিয়া নামে এক দরিদ্র নারীকে। যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়, সেই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশিদ আদালত থেকে শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে সমন গায়েব ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে নানা ষড়যন্ত্র ও কারসাজির আশ্রয় নেন। জামিনযোগ্য ধারার সেই মামলার পরোয়ানা নিয়েই শহিদুল্লাহকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন চান্দগাঁও থানার দুই এএসআই। সাবেক এই দুদক কর্মকর্তা হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এছাড়া তিনি উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। এএসআই ইউসুফ ও সোহেল রানা তাকে গ্রেফতার করতে গেলে অসুস্থতার কথা জানান। এ ধরনের একটি মামলা যে তার বিরুদ্ধে হয়েছে সেই সম্পর্কেও তিনি কিছুই জানতেন না বলে জানান; কিন্তু তার কোনো কথা আমলে না নিয়ে উল্টো গালাগাল করে দুদকের এই কর্মকর্তাকে রাস্তা থেকে টেনেহিঁচড়ে ধরে নিয়ে আসেন দুই এএসআই।
থানায় নিয়ে গিয়ে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিবাদীদের সঙ্গে আপসের জন্য চাপ দেন। গ্রেফতার সময় পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নাইট্রোমিন স্প্রে বা ইনহেলার দিতে চাইলে তাও দিতে দেননি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় থানাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে ঢলে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়।
গত ৩ অক্টোবর রাতে দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায়।
শহিদুল্লাহর মৃত্যুর পর পরই চান্দগাঁও থানার দুই এএসআইকে প্রত্যাহার করা হয়। একইভাবে সাবেক দুদক কর্মকর্তার গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিধিবহির্ভূত কোনো কাজ করা হয়েছে কিনা এবং থানায় নিয়ে যাবার পর তার সঙ্গে নিয়মবহির্ভূত কোনো আচরণ করা হয়েছে কিনা- সেটা নির্ণয়ের জন্য সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
ভুক্তভোগী ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক (ডিডি) পদ থেকে অবসর নেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় বসবাস করতেন। হুমকি-ধমকি ও মানহানির অভিযোগে গত ২৯ আগস্ট শহিদুল্লাহসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন রণি আক্তার তানিয়া।
সেই মামলাটি সোমবার সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে বাদী তানিয়া বলেছিলেন, মামলাটি আমি করিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম ও লিটন আমাকে দিয়ে মামলাটি করিয়েছিলেন। তারা আমার বাসার কিছু জিনিসপত্র আটকে রেখেছিলেন। তারা ওই জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। ওই স্বাক্ষরটি যে মামলার এজাহারে নেওয়া হয়েছে বা এ স্বাক্ষর দিয়েই মামলা করা হবে আমি তা জানতাম না। জসিম, লিটন ও আসাদুজ্জামান আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেছেন তাই আমি করেছি। তাই আমি মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেছিলেন, আমাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে। শহিদুল্লাহ সাহেবের কোনো দোষ ছিল না। তার মৃত্যুর খবর শুনে আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। তিনি মারা যাওয়ার পর লিটন ও জসিম আমাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। আমি যাইনি। সেই মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করেছি।