ব্যাংক ঋণ গড়েছেন সাম্রাজ্য, দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তার ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অভিযোগ আছে অর্থ পাচারেরও; বলছিলাম নূরজাহান গ্রুপের এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ রতনের কথা। তার বেসবুশ, শানসকত, আলিশান বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি সবই ছিল তার কাছে যেন আলাদিনের চেরাগ। কিন্তু আমজনতার কাছে সবই ওই চেরাগের দানের মত হলেও বিপরীতে ছিল ব্যাংক ঋণ।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্য ব্যবসা করতেন রতন। চট্টগ্রামের সাগরিকা শিল্প এলাকায় জমি কিনে সেখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাও স্থাপন করে নূরজাহান গ্রুপ। পণ্য আমদানির পর ব্যাংকের দায় পরিশোধ না করে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, জমি ক্রয়, ভোগবিলাসসহ বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন গ্রুপটির কর্ণধাররা। ব্যাংকগুলো পাওনা আদায়ে জহির আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে অন্তত ৩০টি মামলা দায়ের করেছেন।
গত ২০১১ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে আদালত মামলার শুনানি শেষে আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত আসামিকে দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেন। সাজা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার হন রতন। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে।
জহির উদ্দিন আহমেদ রতন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাসমিন প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স খালেক অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মারবীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেড এবং তাসমিন প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
জানা যায়, পণ্য আমদানির আড়ালে পাচার ছাড়াও নামে-বেনামে সম্পদ ক্রয়, বিভিন্ন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন জহির আহমেদ রতন।
কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ওবায়েদুল হক বলেন, নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী ও খুলশী থানায় মোট ২৬টি সিআর সাজা ও ৩৫টি সিআর গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সর্বমোট ৬১টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নূরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আছে। তিনি দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের একজন। রতন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্য ব্যবসা করতেন। ২০১১-২০১২ সালে এসব ঋণ নিয়েছিলেন। অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংকসহ আরও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা চলমান রয়েছে। অর্থঋণ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন।