চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যেন দালালের দৌরাত্ম্য ও ওষধ পাচারের কর্মকাণ্ড থামছে না কিছুতেই। নিত্য নতুন ফর্মুলায় হাঁটছে এই সকল কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতরা। তবে দালালদের সহযোগিতায় হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল হাসপাতালের ওষধ স্টোর থেকে ওষধ সরানোর নেপথ্যে জড়িত কারা। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে ওষধ সরানোর নেপথ্যে জড়িতদের মুখোশ উম্মোচন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর একটি দল।
দেখা গেছে, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ না থাকলেও ওয়ার্ড রেজিস্ট্রার খাতায় দামি ওষুধের নাম লিখে স্টোর থেকে ওষুধ তুলে নেওয়া হয়েছে। আর এই কাজের সাথে সরাসরি জড়িত আছেন হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত নার্সেরা। দুদকের অভিযানেও এর সত্যতা মিলেছে। হাসপাতালের ইমারজেন্সি কেয়ার ইউনিটে রোগীকে ওষুধ না দিলেও তা লেখা রয়েছে নার্সের কাছে থাকা রেজিস্ট্রার খাতায়। অপরদিকে হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শয্যায় রোগী ভর্তি না থাকা সত্ত্বেও রোগীর নাম দেখিয়ে ওষুধ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম উল্লেখ নেই কিন্তু তা লেখা রয়েছে নার্সের রেজিস্ট্রার খাতায়।
অভিযান সুত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুদকের হট লাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগ যায়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছদ্মবেশে চমেক হাসপাতালে অভিযান চালায় দুদক। এতে ওষুধ নিয়ে নয় ছয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব ওষুধের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সরাই। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ সকল অসঙ্গতির বিষয়ে ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ মিনতি বড়ুয়াকে জিজ্ঞেসবাদ করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক তদন্ত টিম। তিনিও কোনো উত্তর দিতে পারেনি। অভিযানের সময় সঙ্গে ছিলেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হট লাইনে অভিযোগ পাওয়ার পর হাসপাতালে ছদ্মবেশে অভিযান চালাই। আমাদের অভিযানের সময় হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সঙ্গে ছিলেন। তিনি দেখেছেন ওষুধ নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে হাসপাতালে। আমরা বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে অভিহিত করেছি। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের অভিযানে যে অনিয়ম পাওয়া গেছে তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। আমরা কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দিই না। দুইদিন আগে এক দালালকে আটক করে পুলিশ৷ যেই অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।